৬৯ এর গণঅভ্যুত্থানে পুলিশের গুলিতে শহীদ আসাদের মৃত্যু বাঙালির চেতনায় এক নবজাগরণ সৃষ্টি করেছিল
…………………………………………………………………………………………খায়রুল কবির খোকন

নরসিংদী প্রতিনিধি: ১৯৬৯ সালের ২০ জানুয়ারি গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হয়েছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রনেতা আমানুল্লাহ মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান, ইতিহাসে যিনি শহীদ আসাদ নামেই পরিচিত। আসাদের মৃত্যু গণআন্দোলনকে গণঅভ্যুত্থানে বদলে দেয়। আসাদের আত্মাহুতির একমাসের মধ্যে ২২ ফেব্রুয়ারি তখনকার সরকার আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার করে নেয়, মুক্তি পান শেখ মুজিব। পরদিন ২৩ ফেব্রুয়ারি তখনকার রেসকোর্স ময়দানে (আজকের সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) ছাত্র-জনতার বিশাল সমাবেশ করা হয়। আর আসাদের আত্মাহুতির দুই মাসের মধ্যে পতন ঘটে লৌহমানব আইয়ুব খানের এক দশকের স্বৈরশাসনের। তারপর দায়িত্ব নেন আরেক সামরিক শাসক ইয়াহিয়া খান। আসে ৭০-এর নির্বাচন, তার পথ ধরে আসে ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ। বাঙালির ২৩ বছরের মুক্তিসংগ্রামে ২০ জানুয়ারি একটি মাইলস্টোন, আসাদ এক অবিনশ্বর প্রেরণার নাম।
আসাদের স্মৃতি আজ একে একে মুছে যেতে বসেছে,আমাদের স্মৃতি থেকেও হারিয়ে যাচ্ছেন আসাদ। যদিও রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকায় ‘আসাদ গেট’ নামে এক তোরণ আজও আসাদের স্মৃতি মনে করিয়ে দেয়। আসাদ গেট থেকে মোহাম্মদপুরের দিকে যাওয়ার রাস্থাটির নাম আসাদ এভিনিউ। তবে আসাদ গেট বা আসাদ এভিনিউর সাথে শহীদ আসাদের সরাসরি কোনো স্মৃতি নেই। আসাদ মিছিলে পুলিশের গুলিতে হুট করে মারা যাওয়া কেউ নয়। ছাত্র ইউনিয়ন নেতা আসাদুজ্জামান ছিলেন সে আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক, মিছিলের সামনের কাতারের নেতা। আসাদ তাই ছিলেন পুলিশের টার্গেট। আইয়ুব খান তখনকার পূর্ব পাকিস্তান সফরে এসে মোহাম্মদপুর এলাকার ১৫টি বাড়ি বিভিন্ন জনকে বরাদ্দ করেছিলেন। তার সম্মানেই মোহাম্মদপুরে ঢোকার মুখে একটি তোরণ বানানো হয়, যার নামকরণ করা হয় তার নামেই আইয়ুব গেট, সামনের রাস্থাটি হয় আইয়ুব এভিনিউ। ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থানে পুলিশের গুলিতে আসাদ শহীদ হওয়ার পর জনতার মুখে মুখে আইয়ুব গেট হয়ে যায় আসাদ গেট, আইয়ুব এভিনিউ হয়ে যায় আসাদ এভিনিউ। শহীদ আসাদের মৃত্যু বাঙালির চেতনায় এক নবজাগরণ সৃষ্টি করেছিল।