নরসিংদীর বেলাবোতে স্ত্রীকে হত্যার স্বামীকে আমৃত্যু কারাদন্ড ১ জনকে যাবৎজীবন ও ৩ জনকে ৭ বছরের কারাদন্ড প্রদান

স্টাফ রিপোটার্র,নরসিংদী: নরসিংদীর বেলাবোতে স্ত্রীকে হত্যার অভিযোগে পাষন্ড স্বামী শহীদুল ইসলাম সাগরকে আমৃত্যু কারাদন্ড প্রদান করেছে আদালাত। একই সাথে ১ লক্ষ টাকা অর্থদন্ড প্রদান করেন। হত্যাকান্ডে সহযোগীতার জন্য মামুন মিয়া নামে আরেক জনকে যাবৎজীবন কারাদন্ড প্রদান করেছে। একই সাথে তাকে ১০ হাজার টাকা অর্থদন্ড প্রদান করেন। এদিকে হত্যার পর লাশ গুম করার অভিযোগে হোটেলের দুই মালিক দেলোয়ার হোসেন, মো: আনোয়ার ও হোটেল ম্যানেজার মো: আমির হোসেনকে ৭ বছরের কারাদন্ড প্রদান করেন। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে নরসিংদী অতিরিক্ত জেলা ও দায়রার জজ ১ম আদালত এর বিচারক শামিমা পারভিন এই আদেশ প্রদান করেন। মামলার সাজা প্রাপ্ত আসামীরা হলো নিহত মার্জিয়া আক্তার কান্তার স্বামী কুড়িগ্রাম জেলার রৌমারী থানার খলিগঞ্জ গ্রামের গনি মিয়ার ছেলে শহীদুল ইসলার সাগর,তার ফুফাত ভাই একই জেলার রতনপুর গ্রামের মামুন মিয়া, কুয়াকাটা জেলার ছোবাহান এর ছেলে হোটেল আল মদিনার মালিক দেলোয়ার হোসেন (৪৪) তার ভাই মো: আনোয়ার হোসেন (৩৭) ও আল মদিনা হোটেল এর ম্যানেজার পটুয়াখালী জেলার মেহেরপুর গ্রামের মো: আমির হোসেন। এদের মধ্যে শহিদুল ও মামুন পলাতক রয়েছেন।আদালত সূত্রে জানাযায়,২০১৭ সালের ১৮ ই আগষ্ট নরসিংদীর বেলাবো উপজেলার বীর বাঘবের গ্রামের সোহরাব হোসেন রতন এর মেয়ে মার্জিয়া আক্তার কান্তার সাথে কুড়িগ্রাম জেলার রৌমারী থানার খলিগঞ্জ গ্রামের গনি মিয়ার ছেলে শহীদুল ইসলার সাগর এর বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকেই দুই লক্ষ টাকা যৌতুক দাবী করে আসছিল নিহতের স্বামী। এ নিয়ে উভয়ের মধ্যে পারিবারিক বিরোধ সৃষ্টি হয়। এর জের ধরে ১বছর পর নিহত কান্তাকে তার বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। এক মাস পর নিহতের স্বামী সাগর কান্তার বাড়িতে আসে। এবং তাকে ভারত বেড়াতে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে নিয়ে যায়। সেখান থেকে তাকে নিয়ে কুয়াকাটা জেলার আল মদিনা হোটেলে উঠে। সেখানে সাগরের ফুফাতো ভাই মামুনকে সাথে নিয়ে কান্তাকে শ^াসরোদ্ধ করে হোটেলে হত্যা করে। হত্যার পর লাশ পলিথিন দিয়ে পেচিয়ে বক্স খাটের নিচে লুকিয়ে রেখে তারা পালিয়ে যায়। পরে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়লে রুমের বঙ্খাটের নিচে মহিলার লাশ দেখতে পায় হোটেল কতৃপক্ষ। পরে হোটেল আল মদিনার মালিক দুই সহদোর দেলোয়ার,আনোয়ার হোসেন ও হোটেল ম্যানেজার আমির সহ ৩ জন নিহতের লাশ বস্তাবন্ধি করে কুয়াকাটা সাগরে ভাসিয়ে দেয়। দীর্ঘদিনেও মেয়ের খোজ না পেয়ে নিহতের বাবা সোহরাব মিয়া কুড়িগ্রাম মেয়ের শ^শুর বাড়ীতে যায়। সেখানে মেয়ের খোজ জানতে চাইলে তারা জানায় তার মেয়ে কান্তা সড়ক দূর্ঘটনায় মারা গেছে। এক পর্যায়ে কান্তার বাবাকে নানা ধরনের ভয় ভিতি দেখায় মেয়ের স্বামী সাগর। এতে তার সন্দেহ বাড়ে। পরে তিনি মেয়ের স্বামী শ^শুর,শ^াশুরী সহ ৫ জনকে আসামী করে নরসিংদী আদালতে মামলা দায়ের করেন। আদলত মামলাটিকে হত্যা মামলা হিসেবে গন্যকরার জন্য বেলাবো থানার ওসিকে নির্দেশ প্রদান করেন। পরে বেলাবো থানা পুলিশ নিহত কান্তার স্বামীকে গ্রেপ্তার করেন। গ্রেপ্তারের পর সে হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্ধী প্রদান করেন। দীর্ঘ তদন্ত শেষে ১৮জন সাক্ষির সাক্ষ্য গ্রহন শেষে বৃহপতিবার দুপুরে নরসিংদী অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ১ম আদালত এর বিচারক শামিমা পারভিন স্বামীকে আমৃতু কারাদন্ড তার ফুফাতো ভাইকে যাবৎজীবন কারাদন্ড প্রদান করেন। অন্যদিকে হত্যার পর হোটেল থেকে লাশ গুম করার অভিযোগে হোটেল মালিক ও ম্যানেজারকে ৭ বছরের কারাদন্ড প্রদান করেন।নিহতের পিতা মামলার বাদী সোহরাব হোসেন রতন বলেন,রায়ে সন্তুশ প্রকাশ করতে পারছিনা। সরকারের কাছে তার ফাঁসির দাবী জানাচ্ছি। কারন সে যে ভাবে আমার মেয়কে মিথ্যে বলে বাড়ি থেকে নিয়ে হত্যা করেছে,তা আমি কোন ভাবে মানকে পারছিনা। এদিকে আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) এ্যাড.অলিউল্লাহ বলেন,মামলাটি একটি চাঞ্চল্যকর মামলা। এবং ক্লু লেইস মামলা। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা অত্যন্ত বিচক্ষনতার সাথে মামলাটির রহস্য বের করে এনেছেন। কারন মেয়ের বাড়ি নরসিংদী।শ^শুরবাড়ী কুড়িগ্রাম। মেয়েটিকে খুন করার জন্য প্রথমে শরীয়তপুর পরে পটুয়াখালি নিয়ে যাওয়া হয়। সব শেষ কুয়াকাটা নিয়ে মেয়েটিকে হত্যা করে লাশ ফেলে রেখে পালিয়ে যায় স্বামী। আবার হোটেল মালিক মেয়র লাশটিকে গুম করার জন্য সাগরে ভাসিয়ে দেয়। অনেকগুলো ক্রিমিনাল অফেসন্স জড়িত। দীর্ঘ তদন্ত শেষে আদলতের বিচারক একটি দৃষান্ত মূলক রায় দিয়েছে। এতে আমার খুশি।

শেয়ার করুন:

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।