নরসিংদী প্রতিনিধি
চলমান বৈষম্যের প্রতিবাদে কর্মবিরতি পালন করেছে নরসিংদী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা কর্মচারীগণ। রবিবার (৫ মে) সকাল ১০টায় নরসিংদীর চৌয়ালাস্থ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর কার্যালয় প্রাঙ্গণে এ কর্মসূচি পালন করা হয়।
নরসিংদী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর অধীনে জোনাল এবং সাব জোনাল অফিস মিলিয়ে প্রায় শতাধিক কর্মকর্তা কর্মচারীরা এ কর্মসূচিতে অংশগ্রহন করেন।
বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (বিআরইবি) ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির (পবিস) মধ্যে দীর্ঘদিনের বৈষম্য দূর করতে অভিন্ন চাকরি বিধি বাস্তবায়নের দাবিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়ে সারাদেশে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির প্রায় ৪০ হাজার কর্মকর্তা ও কর্মচারী এ কর্মসূচি পালন করছে।
কর্মবিরতি পালন উপলক্ষে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে মাধ্যমে জানানো হয়, পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের দুই নীতির কারনে নানারকম সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছে দেশের ৮০ টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির প্রায় ৪০ হাজার কর্মকর্তা এবং কর্মচারীবৃন্দ।
জানা যায়, সারাদেশের বিভিন্ন প্রত্যন্ত এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহের কাজে নিয়োজিত কর্মীরা একই প্রতিষ্ঠানে চাকরি করার পরও পদ-পদবী, বেতন-ভাতা, বোনাসসহ পদোন্নতির বিষয়ে উর্ধ্বতনদের চরম উদাসীনতার শিকার হয়ে আসছে। তাই কর্মক্ষেত্রে এই বৈষম্য দূরীকরণ ও সমস্যা নিরূপণের লক্ষ্যে সমিতির কর্মকর্তা কর্মচারীরা নিয়ম মেনে গণ স্বাক্ষর সংগ্রহ, বোর্ডের চেয়ারম্যানের কাছে স্মারকলিপি প্রদানসহ তাদের দাবি দাওয়া বাস্তবায়নের আবেদন করেছে। কিন্তু উক্ত সমিতির নিয়ন্ত্রকের পদে অসীন থাকা পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (বিআরইবি) তাদের দাবি না মেনে উল্টো এর বিপরীতে উক্ত প্রক্রিয়ার সাথে যুক্ত ভোলা পবিসের দুইজন এজিএমকে সাময়িক বরখাস্ত, দুইজন এজিএমকে স্ট্যান্ড রিলিজ করে অন্য পিবিএসে শাস্তিমূলক বদলী এবং সিরাজগঞ্জ পবিস-২ এর দুইজন এজিএমকে বোর্ডে সংযুক্ত করে। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন ৮০টি পবিসের প্রায় ৪০ হাজার কর্মকর্তা কর্মচারীরা।
এদিকে নরসিংদী পবিস-২ এর কর্মকর্তা কর্মচারীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, রবিবার থেকে আন্দোলনে গেলেও জেলার সর্বত্র জরুরি বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রেখেছেন তারা। জনগনের সেবার মান অক্ষুন্ন রাখতে ২৩ টি সাবস্টেশন এবং ২টি সুইচিং স্টেশনে প্রতি একটি উপকেন্দ্রের জন্য একজন করে মোট ২৫ জন জনবল কাজ করে যাচ্ছে। এছাড়া বিদ্যুৎ গ্রাহকদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে জরুরী ব্যাবস্থা নিতেও সদর দপ্তরসহ জোনাল ও সাব জোনাল অফিসে ২জন করে জনবল কাজ করছে বলে জানান তারা।
আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি দেশের প্রায় চার কোটি গ্রাহককে ৮০ শতাংশ বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে সর্বদা কাজে নিয়োজিত রয়েছে। বিআরইবি নিয়ন্ত্রিত এসব সমিতির কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা প্রতিনিয়তই নানা ধরনের বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। একই প্রতিষ্ঠানে চাকরি করা সত্ত্বেও দীর্ঘদিন পদ পদবী, পদোন্নতি, বেতন গ্রেড, সাপ্তাহিক ছুটিতে বৈষ্যম্যের বোঝা বয়ে বেড়াচ্ছেন তারা। এছাড়া একই প্রতিষ্ঠানে একই পদে নিয়মিত এবং চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ, লোকবলের স্বল্পতাসহ সব ক্ষেত্রেই বৈষম্যের শিকার সমিতির কর্মকর্তা হবং কর্মচারীগন। এসব বৈষম্য নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ জানানোর বিপরীতে মিলেনি কোন প্রতিকার। বরং এসব ন্যায় সংগত অধিকারের কথা বললেই হয়রানির স্বীকার হতে হয় বলেই অভিযোগ কর্মকর্তা কর্মচারীদের।
নরসিংদী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর সদর দপ্তরে আন্দোলনের এ কর্মসূচিতে যোগ দেন প্রতিষ্ঠানটির উচ্চ থেকে নিন্মপদস্থ সকল শ্রেনীর কর্মকর্তা কর্মচারীরা। এসময় উপস্থিত ছিলেন ডিজিএম কারিগরী প্রকৌশলী মো. জাহাঙ্গীর আলম, ডিজিএম মনোহরদী মো. আজিজুর রহমান সরকার, ডিজিএম রায়পুরা মো. রেজাউল করিম, এজিএম বেলাব মো. ইনামুল হক রাজিব, এজিএম সরারচর আলিমুন রেজা তুহিন, এজিএম মোছা. আফসানা আক্তার বিথি, ইসি মো. রফিকুল ইসলাম, ইসি শফিউল্লাহ আল শামীম আকন্দ, জুনি. ইঞ্জিনিয়ার শরিফুল ইসলাম ভূইয়া, জুনি. ইঞ্জিনিয়ার জিএম মাজেদুল হক, লাইন টেকনিশিয়ান মো. মাইনুল হাসান, লাইন টেকনিশিয়ান মো. হাবিবুর রহমানসহ অন্যান্যরা।